ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সার্ভেয়ারের অপকর্মে লামায় বাড়ছে মামলা

oniyom durnitiলামা প্রতিনিধি :::
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন ও চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভুমি বিরোধের কারনে দিন দিন বেড়েই চলছে হানা-হানি, মামলা-মোকদ্দমা ও হামলার ঘটনা। নুরুল আলম ফারুকী নামের এক বেসরকারী সার্ভেয়ারের কারসাজির কারনেই বিরোধ বাড়ছে বলে জমির মালিক ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এ সার্ভেয়ারের কারসাজি ও হয়রানির কারণে ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে অনেক গরীব মানুষকে। সার্ভেয়ারের এসব অপকর্ম বন্ধে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। অভিযুক্ত সার্ভেয়ার নুরুল আলম ফারুকী কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের শান্তিরবাজার এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহমদের ছেলে বলে জানা গেছে।

অভিযোগে জানা যায়, ১৯৭৯-৮০ সালে তৎকালীন সরকার ফাইতং ইউনিয়নসহ উপজেলার সাত ইউনিয়নে পাঁচ একর হারে বিভিন্ন জনের নামে পাহাড়ি জমি চৌহদ্দী মুলে বন্দোবস্তি প্রদান করে। বন্দোবস্তি পাওয়ার পর ঔ সব জমিতে বহু কায়িক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করে ফলজ, বনজ বাগান সৃজন এবং বসতঘর করে যুগ যুগ ধরে ভোগ দখল করে আসছে বন্দোবস্তি প্রাপ্ত মালিকরা। মাঝে মধ্যে জমির সীমানা নিয়ে এক মালিকের সঙ্গে পাশের মালিকের সাথে টুকিটাকি সমস্যা দেখা দেয়। ওই সমস্যা সমাধানে স্বল্প সময়ে সরকারীভাবে সার্ভেয়ার কিংবা কানুনগো পাওয়া দূরহ বিধায় এসব সমস্যা সমাধানে প্রাথমিকভাবে উপজেলার পাশ্ববর্তী চকরিয়ার বেসরকারী সার্ভেয়ার নুরুল আলম ফারুকীর ধারস্থ হন ভূমির মালিকরা। ঐ সার্ভেয়ার টাকার বিনিময়ে সরেজমিন গিয়ে ভূমি জরিপ করে নির্দিষ্ট হোল্ডিংয়ের জমির স্ব-স্ব মালিককে বুঝিয়ে দেয়। অভিযোগ উঠেছে কয়েকদিন পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরিমাপ করা ওই জমি পূণরায় পরিমাপ করে আরেক হোল্ডিংয়ের মালিককে বুঝিয়ে দেন তিনি। এতে করে জমির মালিকদের মধ্যে শুরু হয় হানা-হানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মামলা-মকদ্দমা। তার এই কারসাজির কারনে গত ছয় মাসে ফাইতং ইউনিয়নে জমি নিয়ে ছোট-খাট অর্ধশতাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ফাইতংয়ের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন, আবু বক্কর ও মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সার্ভেয়ার ফারুকী অত্যন্ত খারাপ লোক। তিনি টাকার বিনিময়ে সব কাজ করতে পারেন। এক জনের জায়গা অন্যে জনকে মেপে দেওয়া তো তার সামান্য ব্যাপার। গত কয়েক বছরে তার কারসাজির কারণে ফাইতং এলাকার বেশ কয়েকজন দুস্থ মানুষকে ভিটে মাটি ছাড়তে হয়েছে। তারা আরও বলেন, গত ২০১১ সালের ১৩ মে সরেজমিন টমাস মার্মা নামের এক আদিবাসীর জমির কাগজপত্র ও হোল্ডিং মুলে কিছু পাহাড়ি জমি পরিমাপ করে দেন ফারুকী। সম্প্রতি অন্য আরেক হোল্ডিংয়ের মালিকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একই জমি আবার আসল মালিক টমাস মার্মার অনুপস্থিতিতে আরেক জনকে মেপে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। সার্ভেয়ার ফারুকীর এ অপকর্ম বন্ধ করা না হলে এলাকায় বড় ধরনের হানা-হানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। তাই এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এসব অপকর্ম বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ফাইতং মৌজা হেডম্যান উম্রা মং মার্মা বলেন, ২০১১ সালে টমাস মার্মা নামের এক ব্যক্তির জমি পরিমাপের জন্য সার্ভেয়ার নুরুল আলম ফারুকীকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি হোল্ডিং ও দখল অনুযায়ী জমি পরিমাপ করে সীমানার খুটি নির্নয় পূর্বক টমাস মার্মাকে জমি বুঝিয়ে দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসে টাকার বিনিময়ে একই জমি আরেক জনকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। এতে করে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।

আরো অভিযোগ উঠেছে ভুমি জরিপ করতে সরকারী ট্রেনিং নিয়ে সার্ভে পাশ করে আমিনের কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে নুরুল আলম ফারুকী কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে সার্ভে ট্রেনিং না নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের ভুমি জরিপ করে হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বরইতলী এলাকার একাধীক ব্যক্তি জানান নুরুল আলম ফারুকী ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বরইতলীর ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছিলেন। ঐ সময় তিনি এরাকার উন্নয়নের নামে সরকারী বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন। এমন কি বিচার-আচারে বাদী-বিবাদীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে মানুষকে হয়রানি করতেন। অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত বেসরকারী সার্ভেয়ার নুরুল আলম ফারুকী বলেন, আমি নিরপেক্ষভাবে জমির পরিমাপ করি। এতে কোন না কোন পক্ষের ক্ষোভ থাকতেই পারে। তিনি আরো বলেন, ২০০৩ সালে ঢাকার ইউনিক টেকনিক্যাল ইনিষ্টিটিউট থেকে আমি সার্ভে ট্রেনিং নিয়েছি। ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন বলেন, জমি পরিমাপে বেসরকারী সার্ভেয়ার নুরুল আলম ফারুকীর কারসাজির বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পাঠকের মতামত: